সমাস
সমাস
ব্যাসবাক্য
সমস্ত পদ
সমস্যমান পদ
পূর্বপদ
পরপদ/ উত্তরপদ
প্রকারভেদ
অর্থ প্রাধান্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ
দ্বন্দ্ব সমাস
কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
উপমেয়
উপমান
সাধারণ ধর্ম
উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমিত কর্মধারয় সমাস
রূপক কর্মধারয় সমাস
তৎপুরুষ সমাস
বহুব্রীহি সমাস
দ্বিগু সমাস
অব্যয়ীভাব সমাস
প্রাদি সমাস
নিত্য সমাস
ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র
শকুন্তলা
যৌবনের গান
একটি তুলসী গাছের কাহিনী
যৌবনের গান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন
সমাস: সমাস শব্দের অর্থ মিলন। অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের মিলিত হয়ে একটি নতুন শব্দ তৈরির ব্যাকরণ সম্মত প্রক্রিয়াকেই বলা হয় সমাস। মূলত, সমাসে একটি বাক্যাংশ একটি শব্দে পরিণত হয়। সমাসের রীতি বাংলায় এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে।
বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সমাস ব্যবহার করা হয়।
উল্লেখ্য, সমাস অর্থ সম্বন্ধপূর্ণ একাধিক শব্দের মিলন। আর সন্ধি পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি ধ্বনির মিলন।
সমাসের জন্য কয়েকটি সংজ্ঞা/ টার্মস জানা খুবই জরুরি। এগুলো হলো-
ব্যাসবাক্য: যে বাক্যাংশ থেকে সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। একে সমাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্যও বলা হয়।
সমস্ত পদ: ব্যাসবাক্য থেকে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় সমস্ত পদ।
সমস্যমান পদ: ব্যাসবাক্যের যে সব শব্দ সমস্ত পদে অন্তর্গত থাকে, সমস্ত পদের সেই সব শব্দকে সমস্যমান পদ বলে।
পূর্বপদ : সমস্ত পদের প্রথম অংশ/ শব্দকে পূর্বপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের প্রথম সমস্যমান পদই পূর্বপদ।
পরপদ/ উত্তরপদ: সমস্ত পদের শেষ অংশ/ শব্দকে পরপদ/ উত্তরপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের শেষ সমস্যমান পদই পরপদ।
যেমন, সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন
এখানে ব্যাসবাক্য হলো- ‘সিংহ চিহ্নিত আসন’। আর সমস্ত পদ হলো ‘সিংহাসন’। সমস্যমান পদ হলো ‘সিংহ’ আর ‘আসন’। এদের মধ্যে ‘সিংহ’ পূর্বপদ, আর ‘আসন’ পরপদ।
আবার, আমিষের অভাব = নিরামিষ
এখানে, পূর্বপদ ‘নিঃ’ বা অভাব। আর পরপদ হলো ‘আমিষ’।
উলেলখ্য, একই সমস্ত পদ কয়েকভাবে ভেঙে কয়েকটি ব্যাসবাক্য তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক ব্যাসবাক্যও কয়েকটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাসবাক্য অনুযায়ী সেটি কোন সমাস তা নির্ণয় করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাসবাক্যের সঙ্গে সমস্ত পদের অর্থসঙ্গতি যেন ঠিক থাকে। যেমন, ‘বিপদে আপন্ন = বিপদাপন্ন’, এই সমাসটি এভাবে ভাঙলে তা ভুল হবে। এটা করতে হবে ‘বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন’।
প্রকারভেদ: সমাস প্রধানত ৬ প্রকার– দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব।
তবে অনেকেই দ্বিগু সমাসকে কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। আবার অনেকে কর্মধারয় সমাসকে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। সমস্যমান পদের অর্থ প্রাধান্য বিবেচনা করে তারা এই মত দিয়ে থাকেন। সমস্যমান পদ বা পূর্বপদ-পরপদের অর্থ প্রাধান্য বিবেচনা করলে মূলত সমাস ৪ প্রকার- দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব।
এছাড়াও কিছু অপ্রধান সমাসও রয়েছে। যেমন- প্রাদি, নিত্য, অলুক, প্রভৃতি।
অর্থ প্রাধান্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ :
পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য | পরপদের অর্থ প্রাধান্য | সমাস |
আছে | আছে | দ্বন্দ্ব |
নেই | আছে | কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু |
আছে | নেই | অব্যয়ীভাব |
নেই | নেই | বহুব্রীহি |
নিচে বিভিন্ন সমাসের বর্ণনা দেয়া হলো।
দ্বন্দ্ব সমাস
যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ- উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ স্থাপনে ও, এবং, আর- এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়।
যেমন- মা ও বাপ = মা-বাপ। এখানে পূর্বপদ ‘মা’ ও পরপদ ‘বাপ’। ব্যাসবাক্যে ‘মা’ ও ‘বাপ’ দুইজনকেই সমান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এবং দুজনকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্বপদ ও পরপদ, উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি দ্বন্দ্ব সমাস।
কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। মূলত, এই সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদ পূর্বপদ ও বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ পরপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর ব্যাসবাক্যটিতে ঐ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদটি সম্পর্কে কিছু বলা হয়। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।
যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। এখানে, পূর্বপদ ‘নীল’ বিশেষণ ও পরপদ ‘পদ্ম’ বিশেষ্য। ব্যাসবাক্যে ‘পদ্ম’ সম্পর্কে বলা হয়েছে পদ্মটি ‘নীল’ রঙের। অর্থাৎ, ‘পদ্ম’ বা পরপদের অর্থই এখানে প্রধান, পরপদ ছাড়া পূর্বপদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই এটি কর্মধারয় সমাস।
কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম-
- দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে এটি দ্বন্দ্ব সমাস হবে না।
- দুইটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব। একই কারণে এটি দ্বন্দ্ব না কর্মধারয় হবে।
- কার্যে পরপম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা। এখানে ‘মোছা’ কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন, সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা
- বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে মহা হয়। মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান
- পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’, ‘কৎ’ হয়। যেমন, কু যে অর্থ = কদর্থ।
- পরপদে ‘রাজা’ থাকলে ‘রাজ’ হয়। যেমন, মহান যে রাজা = মহারাজ।
- বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।
কর্মধারয় সমাস মূলত ৪ প্রকার-
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়: যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদগুলো লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন, ‘স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ’। এখানে ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদ ‘রক্ষার্থে’ লোপ পেয়েছে। পূর্বপদ ‘স্মৃতি’ এখানে বিশেষণ ভাব বোঝাচ্ছে। আর ‘সৌধ’ বিশেষ্য। এটিরই অর্থ প্রধান। সুতরাং এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।
(উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান। আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’। এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।)
উপমান কর্মধারয় সমাস: সাধারণ ধর্মবাচক পদের সঙ্গে উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। অর্থাৎ, উপমান ও উপমেয় কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে, সেটিই উপমান কর্মধারয়। যেমন, তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র। এখানে ‘তুষার’র সঙ্গে কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে তুলনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি উপমান। আর সাধারণ ধর্ম হলো ‘শুভ্র’। উপমেয় এখানে নেই। সুতরাং, এটি উপমান কর্মধারয় সমাস।
উপমিত কর্মধারয় সমাস: উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। এই সমাসে সাধারণ ধর্ম উল্লেখ করা থাকে না। অর্থাৎ, উপমান ও উপমিত কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে না, সেটিই উপমিত কর্মধারয় সমাস। যেমন, ‘পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ’। এখানে ‘পুরুষ’কে ‘সিংহ’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে ‘পুরুষ’ উপমেয় আর ‘সিংহ’ উপমান। সাধারণ ধর্মের উল্লেখ নেই। সুতরাং, এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস।
রূপক কর্মধারয় সমাস: উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এটির ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমান পদের মাঝে ‘রূপ’ শব্দটি অথবা ‘ই’ শব্দাংশটি ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘মন রূপ মাঝি = মনমাঝি’। এখানে ‘মন’ উপমেয় ও ‘মাঝি’ উপমান। কিন্তু এখানে তাদের কোন নির্দিষ্ট গুণের তুলনা করা হয়নি। মনকেই মাঝি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে।
তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পায়, এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। পূর্বপদের যে বিভক্তি লোপ পায়, সেই বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসের নামকরণ করা হয়। তবে মাঝে মাঝে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে অবিকৃত থেকে যায়। তখন সেটাকে বলা হয় অলুক তৎপুরুষ। (অলুক মানে লোপ না পাওয়া, অ-লোপ)।
যেমন, দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত। এখানে পূর্বপদ ‘দুঃখ’র সঙ্গে থাকা দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ পেয়েছে। আবার পরপদ ‘প্রাপ্ত’র অর্থই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখ প্রাপ্ত হয়েছে বলেই নতুন শব্দের প্রয়োজন হয়েছে, যার জন্য বাক্যাংশটিকে সমাস করে নতুন শব্দ বানানো হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পেয়েছে, এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি তৎপুরুষ সমাস।
বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনটিরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয় না, বরং সমস্ত পদ তৃতীয় কোন শব্দকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন, মহান আত্মা যার = মহাত্মা। এখানে পূর্বপদ ‘মহান’ (মহা) ও পরপদ ‘আত্মা’। কিন্তু সমস্ত পদ ‘মহাত্মা’ দ্বারা মহান বা আত্মা কোনটাকেই না বুঝিয়ে এমন একজনকে বোঝাচ্ছে, যিনি মহান, যার আত্মা বা হৃদয় মহৎ। আবার, মহাত্মা বলতে মহাত্মা গান্ধীকেও বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু কোন অর্থেই পূর্বপদ বা পরপদকে বোঝানো হচ্ছে না। অর্থাৎ, পূর্বপদ বা পরপদ, কোনটারই অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে না। সুতরাং, এটি বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ।
(উল্লেখ্য, বহুব্রীহি সমাস, বিশেষ করে কিছু ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস ও উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সমস্ত পদ প্রায় একই ধরনের হয়। ফলে এদের সমস্ত পদ দেখে আলাদা করে চেনার তেমন কোন উপায় নেই। এগুলোর সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাই একই ব্যাসবাক্য ও সমাস নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর পরীক্ষায় মূলত এগুলো উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ হিসেবেই আসে।)
দ্বিগু সমাস
দ্বিগু সমাসের সঙ্গে কর্মধারয় সমাসের বেশ মিল রয়েছে। এজন্য একে অনেকেই কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। দ্বিগু সমাসেও পরপদের অর্থই প্রধান। এবং এই সমাসেও বিশেষণ পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের সমাস হয়। তবে এখানে বিশেষণ পদটি সর্বদাই সংখ্যাবাচক হয়, এবং সমাস হয় সমাহার বা মিলন অর্থে।
অর্থাৎ, সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন, ‘অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু’। এখানে পূর্বপদ ‘অষ্ট’ একটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ। আর পরপদ ‘ধাতু’ বিশেষ্য। অষ্ট ধাতুর মিলন বা সমাহার অর্থে সমাস হয়ে ‘অষ্টধাতু’ সমস্ত পদটি তৈরি হয়েছে যাতে ‘ধাতু’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, পরপদের অর্থ প্রধান হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুতরাং, এটি দ্বিগু সমাস।
অব্যয়ীভাব সমাস
সমাসের পূর্বপদ হিসেবে যদি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, এবং সেই অব্যয়ের অর্থই প্রধান হয়, তবে সেই সমাসকে বলা হয় অব্যয়ীভাব সমাস। যেমন, ‘মরণ পর্যন্ত = আমরণ’। এখানে পূর্বপদ হিসেবে পর্যন্ত অর্থে ‘আ’ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আর পরপদ ‘মরণ’। কিন্তু এখানে সমস্ত পদটিকে নতুন অর্থ দিয়েছে ‘আ’ উপসর্গটি। অর্থাৎ, এখানে ‘আ’ উপসর্গ বা অব্যয় বা পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। তাই এটি অব্যয়ীভাব সমাস। (উপসর্গ এক ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশ। উপসর্গ বচন বা লিঙ্গ ভেদে পরিবর্তিত হয় না কিংবা বাক্যের অন্য কোন পদের পরিবর্তনেও এর কোন পরিবর্তন হয় না। এরকম আরেকটি অব্যয়সূচক শব্দাংশ হলো অনুসর্গ।)
প্রাদি সমাস
প্র, প্রতি, অনু, পরি, ইত্যাদি অব্যয় বা উপসর্গের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যর সমাস হলে তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন। এখানে বচন সমস্যমান পদটি একটি বিশেষ্য, যার মূল (ধাতু)বচ ধাতু বা কৃৎ প্রত্যয়। ‘প্র’ অব্যয়ের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য ‘বচন’র সমাস হয়ে সমস্ত পদ ‘প্রবচন’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। সুতরাং, এটি প্রাদি সমাস।
নিত্য সমাস
যে সমাসের সমস্ত পদই ব্যাসবাক্যের কাজ করে, আলাদা করে ব্যাসবাক্য তৈরি করতে হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন, অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর। এখানে ‘অন্য গ্রাম’ আর ‘গ্রামান্তর’, এই বাক্যাংশ ও শব্দটির মধ্যে তেমন বিশেষকোন পার্থক্য নেই। কেবল ‘অন্য’ পদের বদলে ‘অন্তর’ পদটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এটি নিত্য সমাস।
ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র
শকুন্তলা
শব্দ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
বনমধ্যে | বনের মধ্যে | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
প্রাণভয় | প্রাণ যাওয়ার ভয় | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
রথারোহণ | রথে আরোহণ | সপ্তমী তৎপুরুষ |
রথচালন | রথকে চালন | দ্বিতীয় তৎপুরুষ |
শরনিক্ষেপ | শরকে নিক্ষেপ | দ্বিতীয় তৎপুরুষ |
শরের নিক্ষেপ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ | |
প্রাণবধ | প্রাণের বধ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
অতিমাত্র | মাত্রাকে অতিক্রান্ত | প্রাদি |
বেগসংবরণ | বেগকে সংবরণ | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
বজ্রসম | বজ্রের সম | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ক্ষীণজীবী | ক্ষীণভাবে বাঁচে যে | উপপদ তৎপুরুষ |
অল্পপ্রাণ | অল্পপ্রাণ যার | বহুব্রীহি |
পুত্রলাভ | পুত্রকে লাভ | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
কার্যক্ষতি | কার্যরে ক্ষতি | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
অতিথি সৎকার | অতিথির সৎকার | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ধর্মকার্য | ধর্মবিহিত কার্য | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
ভুজবল | ভুজের বল | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ভারার্পণ | ভারের অর্পণ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
তপোবন | তপের নিমিত্ত বন | চতুর্থী তৎপুরুষ |
তপোবনদর্শন | তপোবনকে দর্শন | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
কোটরস্থিত | কোটরে স্থিত | সপ্তমী তৎপুরুষ |
মুখভ্রষ্ট | মুখ থেকে ভ্রষ্ট | পঞ্চমী তৎপুরুষ |
উপলখণ্ড | উপলের খণ্ড | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
বিস্ময়াপন্ন | বিস্ময়কে আপন্ন | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
কর্ণকুহর | কর্ণের কুহর | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
তপস্বিকন্যা | তপস্বীর কন্যা | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
অনতিবৃহৎ | নয় অতি বৃহৎ | নঞ তৎপুরুষ |
সেচনকলস | সেচনের নিমিত্ত কলস | চতুর্থী তৎপুরুষ |
জলসেচন | জলদ্বারা সেচন | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
অনসূয়া | নেই অসূয়া (ঈর্ষা) যার | বহুব্রীহি |
প্রিয়ংবদা | প্রিয়ম্ (প্রিয়বাক্য) বলে যে (স্ত্রী) | উপপদ |
কণ্বতনয়া | কণ্বের তনয়া | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
মনোহারিণী | মন হরণ করে যে নারী | উপপদ তৎপুরুষ |
স্বভাবসিদ্ধ | স্বভাব দ্বারা সিদ্ধ | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
অঙ্গুলি সংকেত | অঙ্গুলি দ্বারা সংকেত | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
নবযৌবন | নব যে যৌবন | কর্মধারয় |
যৌবনের গান
শব্দ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
মমতারস | মমতা মিশ্রিত রস | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
অলসতন্দ্রা | অলস যে তন্দ্রা | কর্মধারয় |
মোহনিদ্রা | মোহ রূপ নিদ্রা | রূপক কর্মধারয় |
সৈন্যসামন্ত | সৈন্য ও সামন্ত | দ্বন্দ্ব |
সংগীতগুঞ্জন | সংগীতের গুঞ্জন | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ঝরনাধারা | ঝরনার ধারা | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
জবাকুসুমসঙ্কাশ | জবাকুসুমের সঙ্কাশ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
তিমিরবিদারী | তিমিরকে বিদীর্ণ করে যা | কর্মধারয় |
যৌবনসূর্য | যৌবন রূপ সূর্য | রূপক কর্মধারয় |
তিমিরকুন্তলা | তিমিরের ন্যায় কুন্তল যার | উপমিত কর্মধারয় |
পাষাণস্তুপ | পাষাণের স্তুপ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
আলোকপিয়াসী | আলোকের পিয়াসী | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
প্রাণচঞ্চল | প্রাণ চঞ্চল যার | বহুব্রীহি |
মেঘলুপ্ত | মেঘে লুপ্ত | সপ্তমী তৎপুরুষ |
জয়মুকুট | জয়ের জন্য যে মুকুট | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
মার্তণ্ডপ্রায় | মার্তণ্ডের প্রায় | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
নবপৃথিবী | নব যে পৃথিবী | কর্মধারয় |
সলিলসমাধি | সলিলে সমাধি | সপ্তমী তৎপুরুষ |
একটি তুলসী গাছের কাহিনী
শব্দ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
গল্পপ্রেমিক | গল্প প্রেমিক যে | কর্মধারয় |
পুষ্পসৌরভ | পুষ্পের সৌরভ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
জ্যোৎস্নারাত | জ্যোৎস্না শোভিত রাত | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
পৃষ্ঠপ্রদর্শন | পৃষ্ঠকে প্রদর্শন | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
দেশভঙ্গ | দেশকে ভঙ্গ | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
জনমানব | জন ও মানব | দ্বন্দ্ব |
দেশপলাতক | দেশ থেকে পলাতক | পঞ্চমী তৎপুরুষ |
আম-কুড়ানো | আমকে কুড়ানো | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
অনাশ্রিত | নয় আশ্রিত যে | বহুব্রীহি |
সমবেদনা-ভরা | সমবেদনা দিয়ে ভরা | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
মন্দভাগ্য | মন্দ যে ভাগ্য | কর্মধারয় |
মন্দ ভাগ্য যার | বহুব্রীহি | |
ন্যায়সঙ্গত | ন্যায় দ্বারা সঙ্গত | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
জীবনসঞ্চার | জীবনের সঞ্চার | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
আবর্জনা-ভরা | আবর্জনা দ্বারা ভরা | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
গানের আসর | গানের আসর | অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
রান্নাঘর | রান্না করা ঘর | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
রান্নার নিমিত্ত ঘর | চতুর্থী তৎপুরুষ | |
বেওয়ারিশ | বে (নেই) ওয়ারিশ যার | নঞর্থক বহুব্রীহি |
সন্ধ্যাপ্রদীপ | সন্ধ্যার প্রদীপ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
জীবনপ্রদীপ | জীবন রূপ প্রদীপ | রূপক কর্মধারয় |
সুখসময় | সুখের সময় | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
গৃহকর্ত্রী | গৃহের কর্ত্রী | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
বাকবিতণ্ডা | বাক দ্বারা বিতণ্ডা | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
অত্যাচার অবিচার | অত্যাচার ও অবিচার | দ্বন্দ্ব |
শ্বাস-প্রশ্বাস | শ্বাস ও প্রশ্বাস | দ্বন্দ্ব |
কচুকাটা | কচুর মত কাটা | উপমান কর্মধারয় |
অক্ষত | নয় ক্ষত | নঞ তৎপুরুষ |
অবিশ্বাস্য | নয় বিশ্বাস্য | নঞ তৎপুরুষ |
বেআইনি | বে (নয়) আইনি | নঞ তৎপুরুষ |
অপর্যাপ্ত | নয় পর্যাপ্ত | নঞ তৎপুরুষ |
যৌবনের গান
শব্দ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন | শ্রম-কিণাঙ্কের ন্যায় কঠিন | উপমান কর্মধারয় |
বন্য-শ্বাপদ-সঙ্কুল | বন্য-শ্বাপদে সঙ্কুল | সপ্তমী তৎপুরুষ |
জরা-মৃত্যু-ভীষণা | জরা-মৃত্যুতে ভীষণা | সপ্তমী তৎপুরুষ |
ধরণী-মেরী | ধরনী রূপ মেরী | রূপক কর্মধারয় |
খেয়াল-খুশি | খেয়াল ও খুশি | দ্বন্দ্ব |
জীবন-আবেগ | জীবনের আবেগ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
উদ্ধত-শির | উদ্ধত শির যার | বহুব্রীহি |
সিন্ধু-নীর | সিন্ধুর নীর | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
যৌবন-বেগ | যৌবনের বেগ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
মরু-কবি | মরুর কবি | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
বিপ্লব-অভিযান | বিপ্লব ও অভিযান | দ্বন্দ্ব |
গরল-পিয়ালা | গরলের পিয়ালা | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
গিরি-নিঃস্রাব | গিরি হতে নিঃসৃত যা | বহুব্রীহি |
কূপমণ্ডুক | কূপের মণ্ডুক | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন
- ‘বিপদাপন্ন’ শব্দের ব্যাসবাক্য (ঘ-২০০২-০৩)
- ‘হলুদবাটা’ সমাসবদ্ধ শব্দের ব্যাসবাক্য- (ঘ-২০০৩-০৪)
- দ্বিগু সমাসে কোন পদের প্রাধান্য থাকে? (ঘ-২০০৪-০৫)
- ‘উপাচার্য’ শব্দটি কোন সমাস সাধিত? ? (ঘ-২০০৪-০৫)
- ‘অতিমাত্র’ সমাসবদ্ধ শব্দের ব্যাসবাক্য (ঘ-২০০৫-০৬)
- অসংলগ্ন সমাস (ঘ-২০০৮-০৯)
- নিচের কোনটি নিত্য সমাসের দৃষ্টান্ত? (ঘ-২০০৯-১০)
- ‘ক্ষীণজীবী’ কোন সমাস? (ক-২০০৬-০৭)
- ‘ধামাধরা’ শব্দটি কোন সমাস? (ক-২০০৭-০৮)
- ‘শোকানল’ শব্দটি কোন সমাস দ্বারা গঠিত?(ক-২০০৮-০৯)
- ‘ভোটাধিকার’ কোন সমাস? (ক-২০০৮-০৯)
- ‘হা-ভাত’ এর সঠিক ব্যাস বাক্য কোনটি? (গ-২০০৯-১০)
- ‘প্রাণভয়’ কোন সমাস? (গ-২০০৮-০৯)
- ‘মানবহৃদয়’ কোন জাতীয় সমাসবদ্ধ পদ? (গ-২০০৭-০৮)
- ‘গল্পপ্রেমিক’ কোন জাতীয় সমাসবদ্ধ পদ? (গ-২০০৭-০৮)
- ‘প্রাণভয়’ এর ব্যাসবাক্য হবে: (গ-২০০৬-০৭)
- ‘কোলে ও পিঠে=কোলেপিঠে’- এটি কোন প্রকার সমাস? (গ-২০০৬-০৭)
- ‘বকধার্মিক’ কোন সমাস: (গ-২০০৪-০৫)
- ‘আম-কুড়ানো’ কোন সমাস? (গ-২০০২-০৩)
- ‘কাপুরুষ’ শব্দের সমাস কোনটি? (গ-২০০১-০২)
এইচ.এস.সি বাংলা ২য়পত্রের সকল অধ্যায় / অন্যান্য অধ্যায়সমুহ দেখতে এখানে যান
1 responses on "এইচএসসি বাংলা ২য়পত্র ব্যাকরণ : সমাস"